নগর আওয়ামী লীগ: সম্মেলনের আভাসে প্রাণচাঞ্চল্য

চট্টগ্রাম •


তৃণমূল থেকে সম্মেলনের আভাস পাওয়ার পর নগর আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে যেমন প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে গ্রুপিংয়ের রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। দলীয় সূত্র জানায়, বিভেদ-বিভক্তির কারণে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি গঠনের বিষয়টি সব সময়ই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আলোচিত। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতাদের চোখ এখন দলের মহানগর কমিটির দিকে।

আগামী ২০ ও ২১ জুন চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন এবং নগরের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সাথে বৈঠকের ঘোষণা সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে চাঙা করেছে। তিন বছরের নগর কমিটি পার করেছে সাত বছর সাত মাস। মূলত গ্রুপিংয়ের কারণে ইউনিট, ওয়ার্ডের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করতে পারেনি সংগঠনটি। ইউনিট এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলন করে কমিটি গঠনের উদ্যোগ একবার ভেস্তে দেয় কেন্দ্র। কারণ চট্টগ্রাম থেকে একটি পক্ষ এই সম্মেলন বন্ধ করার জন্য জোরালো তদবির করে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পরে কেন্দ্র থেকে জানানো হয় সিটি নির্বাচনের পরই মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। নির্বাচনের প্রায় সাত মাস পর এসে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ইউনিট থেকে নগর পর্যন্ত পরবর্তী নেতৃত্ব কাদের হাতে যাচ্ছে, নেতা-কর্মীদের আলোচনায় ঘুরেফিরে এ বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। কারণ বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ছাড়াও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক ঝাঁক সাবেক নেতৃত্ব আছেন যারা ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা এবং নগর কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য মূখিয়ে আছেন। তারা আবার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। কারণ একেকটি গ্রুপ একেকজন নেতাকে অনুসরণ করে। দীর্ঘদিন ধরে মূল সংগঠন এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের তৃণমূল থেকে নগর কমিটি পর্যন্ত কোন পর্যায়েই সম্মেলন হয়নি। তাই প্রতিটি পর্যায়েই নেতৃত্বের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ জেলা এবং উপজেলাসমূহের নেতৃবৃন্দের সাথে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করে সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করে দেন।

আগামী ২০ ও ২১ জুন নগরের তৃণমূল থেকে নগর কমিটির সব পর্যায়ের নেতাদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করবেন। অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে তৃণমূল থেকে সম্মেলন করার নির্দেশ আসবে এমন পূর্বাভাস ইতোমধ্যে নগর এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নিশ্চিত করেছেন। এই আগাম তথ্যটি তৃণমূলের নেতাদের উদ্বুদ্ধ করেছে। ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা পর্যায়ে জায়গা পেতে নেতাকর্মীরা যে যার মত করে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। সিনিয়র নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে। এমনকি যাদের ঢাকায় যোগাযোগ রয়েছে তারা সেখানেও যোগাযোগ করছেন।

অপরদিকে, দিন যত গড়াচ্ছে নগর আওয়ামী লীগে জ্যেষ্ঠ নেতার সংখ্যা তত বাড়ছে। রাজনৈতিক বলয়ের সংখ্যাও তত বাড়ছে। একসময় এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং আ জ ম নাছির উদ্দীনের গ্রুপিং সবচেয়ে বেশি আলোচিত হত। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর পুত্র মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। তিনিসহ নগর আওয়ামী লীগের ছয়জন সহসভাপতি এখন সভাপতি পদের দাবিদার। মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছিরের বাইরে নিজ নিজ সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে নগর কমিটির সহসভাপতির দায়িত্বে থাকা সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম (বিএসসি) ও আফসারুল আমিনেরও। আরেক সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলও আলোচনায় আছেন। তিনি সিটি নির্বাচনে রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন।

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ আইন অঙ্গনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। আরেক সহসভাপতি আলতাফ হোসেনও সভাপতি পদের দাবিদার। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ পাওয়ার পর খোরশেদ আলম সুজনের কর্মকা- নগরবাসীর বড় একটা অংশকে মুগ্ধ করেছে। তারও একটি বলয় আছে। এছাড়া রয়েছেন বর্তমান মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি নগর আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক। মেয়র হওয়ার পর তার রাজনৈতিক অনুসারীর সংখ্যা বেড়েছে। এর বাইরে সিডিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান জহিরুল আলম এবং সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামও বড় পদের দাবিদার হয়ে উঠতে পারেন। জহিরুল আলম বর্তমান কমিটির সহসভাপতি এবং ছালাম কোষাধ্যক্ষ। এছাড়া আছেন নগরের মন্ত্রী ও এমপিরা। নগর আওয়ামী লীগের এসব জ্যেষ্ঠ নেতা নগরীর ইউনিট, ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সাধ্যমত চেষ্টা করবেন কমিটিতে নিজ বলয়ের অনুসারীদের স্থান দিতে। তখনই সৃষ্টি হবে জটিলতা।

উল্লেখ্য, নগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনসমূহের কোন কমিটিরই এখন মেয়াদ নেই। ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর তিন বছরের জন্য নগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা হয়। একই বছরের ১১ জুলাই তিন মাসের জন্য গঠিত ১০১ সদস্যের এই কমিটির আহবায়ক কমিটি এবং ৩০ অক্টোবর নগর ছাত্রলীগের কমিটি হয়। স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি হয় দুই দশক আগে। অবশ্য আগামী ১৯ জুন নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন হচ্ছে।